দাদ চুলকানি দূর করার ঘরোয়া উপায়: ১০টি অব্যর্থ প্রাকৃতিক সমাধান
দাদ চুলকানি দূর করার ঘরোয়া উপায়: ১০টি অব্যর্থ প্রাকৃতিক সমাধান
দাদ
(Ringworm) একটি
অস্বস্তিকর এবং
বিরক্তিকর চর্মরোগ। এর
বৈজ্ঞানিক নাম
ডার্মাটোফাইটোসিস (Dermatophytosis)। এটি
এক
ধরনের
ছত্রাকজনিত সংক্রমণ, যা
ত্বকের
উপরের
অংশে
প্রভাব
ফেলে।
অনেকেই
এর
নাম
শুনে
ভাবেন
যে
এটি
কোনো
কৃমি
বা
পোকার
কারণে
হয়,
কিন্তু
ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল।
এর
নামকরণ
হয়েছে
কারণ
সংক্রমণের স্থানটি দেখতে
একটি
লাল
গোলাকার আংটির
(Ring) মতো
হয়।
এই
সংক্রমণে আক্রান্ত স্থানটি ভীষণ
চুলকায়
এবং
সঠিক
সময়ে
চিকিৎসা না
করলে
এটি
শরীরের
অন্যান্য অংশেও
ছড়িয়ে
পড়তে
পারে।
বাজারে
বিভিন্ন ধরনের
অ্যান্টিফাঙ্গাল ক্রিম
ও
ঔষধ
পাওয়া
গেলেও,
অনেকেই
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভয়ে
বা
প্রাথমিক অবস্থায় ঘরোয়া
উপায়েই
এর
সমাধান
করতে
চান।
সুখবর
হলো,
আমাদের
রান্নাঘরেই এমন
অনেক
জিনিস
রয়েছে
যা
দাদের
সংক্রমণ কমাতে
এবং
চুলকানি থেকে
মুক্তি
দিতে
অত্যন্ত কার্যকরী।
এই
আর্টিকেলে আমরা
দাদ
চুলকানি দূর
করার
সবচেয়ে কার্যকরী কিছু
ঘরোয়া
উপায়,
দাদের
লক্ষণ,
কারণ
এবং
এটি
প্রতিরোধের উপায়
নিয়ে
বিস্তারিত আলোচনা
করব।
দাদ আসলে কী? (What is Ringworm?)
দাদ
হলো
এক
প্রকার
ছত্রাকের সংক্রমণ যা
টিনিয়া
(Tinea) নামক
এক
ধরনের
ছত্রাক
দ্বারা
সৃষ্ট
হয়।
এই
ছত্রাকগুলো আমাদের
ত্বক,
চুল
এবং
নখের
মৃত
কেরাটিন (Keratin) নামক প্রোটিন খেয়ে
বেঁচে
থাকে।
এটি
শরীরের
যেকোনো
অংশে
হতে
পারে,
যেমন
- হাত,
পা,
কুঁচকি,
মাথার
ত্বক,
বা
নখ।
সংক্রমণের স্থানের উপর
নির্ভর
করে
এর
বিভিন্ন নামও
রয়েছে,
যেমন
- পায়ে
হলে
তাকে
‘অ্যাথলেটস ফুট’
(Tinea Pedis) এবং
কুঁচকিতে হলে
‘জক
ইচ’
(Tinea Cruris) বলা
হয়।
বিশ্ব
স্বাস্থ্য সংস্থা
(WHO) ছত্রাকজনিত রোগগুলোকে জনস্বাস্থ্যের জন্য
একটি
ক্রমবর্ধমান হুমকি
হিসেবে
চিহ্নিত করেছে।
তাই
এই
বিষয়ে
সচেতন
থাকা
অত্যন্ত জরুরি।
World Health Organization (WHO) Fungal Priority
Pathogens List থেকে এ
সম্পর্কে আরও
জানতে
পারেন।
দাদের সাধারণ লক্ষণগুলো কী কী?
দাদের
সংক্রমণ সনাক্ত
করা
খুব
কঠিন
নয়।
এর
কিছু
সাধারণ
লক্ষণ
নিচে
দেওয়া
হলো:
- গোলাকার
লাল র্যাশ: আক্রান্ত
স্থানে একটি লাল, সামান্য ফোলা এবং আংটির মতো গোলাকার দাগ দেখা যায়।
- ভীষণ
চুলকানি: আক্রান্ত
স্থানটি প্রচণ্ড চুলকায়, যা রাতের বেলা বা গরমে আরও বাড়তে পারে।
- পরিষ্কার
মধ্যভাগ: র্যাশের মাঝখানের অংশ সাধারণত পরিষ্কার বা হালকা আঁশযুক্ত থাকে এবং চারপাশের বর্ডারটি বেশি লাল ও
উঁচু হয়।
- আঁশযুক্ত
ত্বক: আক্রান্ত
স্থানের ত্বক শুষ্ক ও
আঁশযুক্ত হয়ে যায়।
- ফোস্কা: কিছু ক্ষেত্রে, র্যাশের চারপাশে ছোট ছোট ফোস্কা বা পুঁজ ভর্তি দানা দেখা যেতে পারে।
- চুল
পড়া: মাথার ত্বকে দাদ হলে সেই নির্দিষ্ট
স্থানের চুল পড়ে যেতে পারে।
দাদ কেন হয় এবং কীভাবে ছড়ায়?
দাদ
একটি
অত্যন্ত ছোঁয়াচে রোগ।
এর
পেছনের
কারণ
এবং
ছড়ানোর
মাধ্যমগুলো জানা
থাকলে
প্রতিরোধ করা
সহজ
হয়।
কারণ:
দাদ
মূলত
ডার্মাটোফাইটস (Dermatophytes) নামক ছত্রাকের কারণে
হয়।
এই
ছত্রাকগুলো উষ্ণ
এবং
আর্দ্র
পরিবেশে দ্রুত
বৃদ্ধি
পায়।
ছড়ানোর মাধ্যম:
- মানুষ
থেকে মানুষে (Human-to-Human):
সংক্রমিত ব্যক্তির সরাসরি সংস্পর্শে এলে বা তার ব্যবহৃত জিনিসপত্র, যেমন - তোয়ালে, চিরুনি, পোশাক ব্যবহার করলে এটি ছড়াতে পারে।
- পশু
থেকে মানুষে (Animal-to-Human):
পোষা প্রাণী যেমন - বিড়াল বা কুকুরের শরীর থেকে এই সংক্রমণ মানুষের মধ্যে ছড়াতে পারে। পোষা প্রাণীর গায়ে দাদ হলে তার шерশম পড়ে যায় এবং গোলাকার দাগ দেখা যায়।
- বস্তু
থেকে মানুষে (Object-to-Human):
ছত্রাক সংক্রমিত বস্তু, যেমন - পাবলিক সুইমিং পুলের মেঝে, জিমের সরঞ্জাম, বা শেয়ার করা পোশাকের মাধ্যমেও এটি ছড়াতে পারে।
- মাটি
থেকে মানুষে (Soil-to-Human):
বিরল হলেও, ছত্রাকযুক্ত মাটির সংস্পর্শে আসলেও দাদ হতে পারে।
Centers for Disease Control and Prevention (CDC) এর
মতে,
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায়
রাখা
দাদ
প্রতিরোধের অন্যতম
সেরা
উপায়।
দাদ চুলকানি দূর করার সেরা ১০টি ঘরোয়া উপায়
এবার
আসা
যাক
মূল
আলোচনায়। নিচে
দাদ
এবং
এর
চুলকানি থেকে
মুক্তি
পাওয়ার
জন্য
কিছু
পরীক্ষিত এবং
কার্যকরী ঘরোয়া
উপায়
দেওয়া
হলো।
মনে
রাখবেন,
এই
প্রতিকারগুলো প্রাথমিক পর্যায়ের সংক্রমণের জন্য
সবচেয়ে
ভালো
কাজ
করে।
সংক্রমণ গুরুতর
হলে
অবশ্যই
চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
১. হলুদের পেস্ট
হলুদ
শুধুমাত্র একটি
মশলাই
নয়,
এটি
একটি
শক্তিশালী প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক এবং
অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান। হলুদে
থাকা
কারকিউমিন (Curcumin) নামক যৌগটি
ছত্রাকের কোষ
প্রাচীরকে ক্ষতিগ্রস্ত করে
এবং
এর
বৃদ্ধি
রোধ
করে।
ব্যবহারের পদ্ধতি:
- এক চামচ খাঁটি হলুদের গুঁড়োর সাথে সামান্য জল বা নারকেল তেল মিশিয়ে একটি ঘন পেস্ট তৈরি করুন।
- পেস্টটি দাদের ওপর ভালোভাবে
লাগিয়ে দিন।
- শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত (কমপক্ষে ৩০-৪০ মিনিট) অপেক্ষা করুন।
- এরপর হালকা গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- দিনে দুই থেকে তিনবার এটি ব্যবহার করুনจน পর্যন্ত সংক্রমণ पूरी तरह से ठीक न
हो जाए।
২. নিম পাতার ব্যবহার
প্রাচীনকাল থেকেই
নিম
পাতা
চর্মরোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে
আসছে।
নিমের
মধ্যে
থাকা
নিম্বিডিন (Nimbidin) এবং জেডুনিন (Gedunin) নামক উপাদানগুলোর শক্তিশালী অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং
অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
ব্যবহারের পদ্ধতি:
- এক মুঠো তাজা নিম পাতা ভালোভাবে
পিষে একটি পেস্ট তৈরি করুন।
- এই পেস্টটি সরাসরি আক্রান্ত
স্থানে লাগিয়ে দিন।
- ৩০-৪০ মিনিট রাখার পর জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- বিকল্পভাবে,
নিম পাতা জলে ফুটিয়ে সেই জল ঠান্ডা করে আক্রান্ত স্থানটি ধোয়ার জন্য ব্যবহার করতে পারেন। এটি চুলকানি কমাতে সাহায্য করবে।
৩. রসুনের কোয়া
রসুনকে
বলা
হয়
'প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক'।
রসুনে
থাকা
অ্যাজোইন (Ajoene) নামক একটি
সালফার
যৌগ
ছত্রাক
সংক্রমণের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কার্যকরী। গবেষণায় দেখা
গেছে
যে
অ্যাজোইন অনেক
প্রচলিত অ্যান্টিফাঙ্গাল ঔষধের
মতোই
কাজ
করে।
ব্যবহারের পদ্ধতি:
- ২-৩টি রসুনের কোয়া থেঁতো করে নিন।
- এর সাথে এক চামচ নারকেল তেল বা অলিভ অয়েল মেশান।
- এই মিশ্রণটি
পাতলা করে দাদের ওপর লাগান এবং একটি ব্যান্ডেজ দিয়ে ঢেকে রাখতে পারেন।
- ২ ঘন্টা পর জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- সতর্কতা: খালি রসুন مباشرة ত্বকে লাগালে जलन বা পোড়াভাব হতে পারে, তাই সবসময় তেলের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করুন। সংবেদনশীল ত্বকে ব্যবহারের আগে অল্প জায়গায় পরীক্ষা করে নিন।
৪. টি ট্রি অয়েল
(Tea Tree Oil)
টি
ট্রি
অয়েল
তার
শক্তিশালী অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং
অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণের
জন্য
বিশ্বজুড়ে পরিচিত। এটি
দাদের
ছত্রাককে কার্যকরভাবে ধ্বংস
করতে
পারে।
ব্যবহারের পদ্ধতি:
- টি ট্রি অয়েল খুবই শক্তিশালী,
তাই এটি সরাসরি ত্বকে ব্যবহার করা উচিত নয়।
- এক চামচ নারকেল তেল বা বাদাম তেলের সাথে ২-৩ ফোঁটা টি ট্রি অয়েল মেশান।
- একটি তুলার বলের সাহায্যে
এই মিশ্রণটি আক্রান্ত স্থানে দিনে তিনবার লাগান।
- Healthline এর একটি আর্টিকেলে এর কার্যকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
৫. অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার (Apple Cider
Vinegar)
অ্যাপেল সাইডার
ভিনেগারের অ্যাসিটিক অ্যাসিড ছত্রাকের বৃদ্ধি
ব্যাহত
করে।
এটি
চুলকানি কমাতেও
সাহায্য করে।
ব্যবহারের পদ্ধতি:
- একটি তুলার বল অপরিশোধিত
(unfiltered) অ্যাপেল সাইডার ভিনেগারে ভিজিয়ে নিন।
- সরাসরি দাদের ওপর আলতো করে লাগান। শুরুতে সামান্য জ্বালাপোড়া
করতে পারে, যা স্বাভাবিক।
- দিনে তিন থেকে চারবার এটি পুনরাবৃত্তি
করুন।
- যদি জ্বালাপোড়া
বেশি হয়, তাহলে ভিনেগারের সাথে সমপরিমাণ জল মিশিয়ে ব্যবহার করুন।
৬. অ্যালোভেরা জেল
অ্যালোভেরা তার
শীতল
এবং
প্রশান্তিদায়ক গুণের
জন্য
পরিচিত। এতে
থাকা
অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং
অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান
দাদের
কারণে
হওয়া
চুলকানি, জ্বালা
এবং
লাল
ভাব
কমাতে
সাহায্য করে।
ব্যবহারের পদ্ধতি:
- একটি তাজা অ্যালোভেরা
পাতা থেকে জেল বের করে নিন।
- এই জেলটি সরাসরি আক্রান্ত
স্থানে লাগিয়ে রাখুন। এটি ধোয়ার প্রয়োজন নেই, ত্বক নিজে থেকেই শুষে নেবে।
- দিনে বেশ কয়েকবার এটি লাগাতে পারেন। এটি ত্বককে ময়েশ্চারাইজড
রাখতেও সাহায্য করে।
৭. নারকেল তেল
নারকেল
তেল
শুধুমাত্র একটি
চমৎকার
ময়েশ্চারাইজারই নয়,
এতে
থাকা
ফ্যাটি
অ্যাসিড (যেমন
- লরিক
অ্যাসিড) ছত্রাকের বিরুদ্ধে লড়াই
করতে
পারে।
এটি
হালকা
সংক্রমণের জন্য
একটি
সহজ
এবং
নিরাপদ
প্রতিকার।
ব্যবহারের পদ্ধতি:
- খাঁটি ভার্জিন নারকেল তেল নিন।
- আক্রান্ত
স্থানটি পরিষ্কার করে শুকিয়ে নিন।
- এরপর আলতো করে তেল ম্যাসাজ করুন।
- দিনে তিন থেকে চারবার ব্যবহার করুন। এটি চুলকানি কমাতে এবং ত্বককে নরম রাখতে সাহায্য করবে।
৮. কাঁচা পেঁপের রস
কাঁচা
পেঁপেতে প্যাপাইন (Papain) এবং কাইমোপ্যাপাইন (Chymopapain) নামক এনজাইম
থাকে
যা
প্রদাহ
কমাতে
এবং
ছত্রাকের কোষকে
ভাঙতে
সাহায্য করে।
ব্যবহারের পদ্ধতি:
- এক টুকরো কাঁচা পেঁপে কেটে নিন বা ব্লেন্ড করে পেস্ট তৈরি করুন।
- এই রস বা পেস্টটি দাদের ওপর লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট রাখুন।
- এরপর হালকা গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- দিনে দুবার ব্যবহার করলে ভালো ফল পাবেন।
৯. অরিগ্যানো অয়েল (Oregano Oil)
অরিগ্যানো অয়েল
কারভাক্রোল (Carvacrol) এবং থাইমল
(Thymol) নামক
দুটি
শক্তিশালী অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদানে সমৃদ্ধ। এটি
টি
ট্রি
অয়েলের
মতোই
কার্যকরী।
ব্যবহারের পদ্ধতি:
- এটিও একটি শক্তিশালী
তেল, তাই ক্যারিয়ার অয়েলের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করতে হবে।
- এক চামচ অলিভ অয়েলের সাথে ২ ফোঁটা অরিগ্যানো অয়েল মেশান।
- তুলার সাহায্যে
মিশ্রণটি আক্রান্ত স্থানে দিনে দুবার লাগান।
১০. লবণ এবং ভিনেগারের মিশ্রণ
লবণ
একটি
প্রাকৃতিক অ্যাস্ট্রিনজেন্ট যা
ত্বককে
শুষ্ক
করতে
সাহায্য করে,
ফলে
ছত্রাকের বৃদ্ধির জন্য
প্রতিকূল পরিবেশ
তৈরি
হয়।
ব্যবহারের পদ্ধতি:
- এক চামচ লবণ এবং এক চামচ সাদা ভিনেগার মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন।
- পেস্টটি দাদের ওপর লাগিয়ে ৫-১০ মিনিট রাখুন।
- প্রথমে একটু জ্বালা করতে পারে। শুকিয়ে গেলে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- দিনে একবার ব্যবহার করুন।
দাদ প্রতিরোধ করার উপায় (Prevention is
Better Than Cure)
একবার
দাদ
সেরে
যাওয়ার
পর
তা
যেন
আবার
ফিরে
না
আসে,
সেজন্য
কিছু
নিয়ম
মেনে
চলা
জরুরি।
- পরিষ্কার
ও শুষ্ক থাকুন: শরীর, বিশেষ করে ভাঁজের জায়গাগুলো
(যেমন কুঁচকি, বগল) সবসময় পরিষ্কার ও
শুকনো রাখুন। গোসলের পর ভালোভাবে শরীর মুছুন।
- নিয়মিত
পোশাক পরিবর্তন করুন: প্রতিদিন
পরিষ্কার এবং শুকনো পোশাক, মোজা ও
অন্তর্বাস পরুন।
- ঢিলেঢালা
পোশাক পরুন: সুতির বা বাতাস চলাচল করতে পারে এমন কাপড়ের ঢিলেঢালা
পোশাক পরুন।
- অন্যের
জিনিস ব্যবহার করবেন না: তোয়ালে, চিরুনি, বিছানার চাদর বা পোশাক অন্যের সাথে শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন।
- পাবলিক
স্থানে সতর্ক থাকুন: পাবলিক শাওয়ার, লকার রুম বা সুইমিং পুলে খালি পায়ে হাঁটবেন না। স্যান্ডেল
ব্যবহার করুন।
- পোষা প্রাণীর যত্ন নিন: আপনার বাড়িতে পোষা প্রাণী থাকলে তাদের নিয়মিত পরীক্ষা করুন। তাদের শরীরে দাদের কোনো লক্ষণ দেখলে পশু চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান।
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি?
ঘরোয়া
প্রতিকারগুলো প্রায়শই কার্যকরী হলেও,
কিছু
ক্ষেত্রে চিকিৎসকের সাহায্য নেওয়া
অপরিহার্য।
- সংক্রমণ
না কমলে: ১-২ সপ্তাহ ঘরোয়া প্রতিকার ব্যবহারের পরেও যদি কোনো উন্নতি না হয়।
- সংক্রমণ
ছড়িয়ে পড়লে: দাদ যদি দ্রুত শরীরের অন্যান্য
অংশে ছড়িয়ে পড়তে থাকে।
- গুরুতর
অবস্থা: আক্রান্ত
স্থানটি খুব বেশি লাল, ফোলা, যন্ত্রণাদায়ক বা পুঁজযুক্ত হয়ে গেলে।
- মাথার
ত্বকে সংক্রমণ: মাথার ত্বকে
(Tinea Capitis) বা দাড়িতে দাদ হলে সাধারণত খাওয়ার ঔষধের প্রয়োজন হয়, যা শুধুমাত্র ডাক্তারই প্রেসক্রাইব করতে পারেন।
- দুর্বল ইমিউন সিস্টেম: যদি আপনার ডায়াবেটিস থাকে বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
সাধারণ জিজ্ঞাসা (Frequently Asked
Questions - FAQ)
প্রশ্ন ১: ঘরোয়া উপায় ব্যবহার করলে দাদ সারতে কতদিন সময় লাগে?
উত্তর: এটি সংক্রমণের তীব্রতা এবং
আপনার
শরীরের
রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতার উপর
নির্ভর
করে।
সাধারণত, নিয়মিত
ব্যবহারে ৭
থেকে
২১
দিনের
মধ্যে
উন্নতি
দেখা
যায়।
সম্পূর্ণ সারতে
এক
মাস
বা
তার
বেশি
সময়ও
লাগতে
পারে।
প্রশ্ন ২: দাদের চুলকানি কমানোর দ্রুততম উপায় কী?
উত্তর: তাৎক্ষণিক চুলকানি কমাতে
অ্যালোভেরা জেল
বা
বরফ
সেঁক
(একটি
কাপড়ে
বরফ
জড়িয়ে)
দিতে
পারেন।
নারকেল
তেলও
চুলকানি কমাতে
বেশ
কার্যকর।
প্রশ্ন ৩: দাদ কি একবার সেরে যাওয়ার পর আবার হতে পারে?
উত্তর: হ্যাঁ, হতে
পারে।
যদি
ছত্রাক
সম্পূর্ণভাবে নির্মূল না
হয়
বা
আপনি
পুনরায়
সংক্রমিত ব্যক্তির বা
বস্তুর
সংস্পর্শে আসেন,
তাহলে
দাদ
আবার
ফিরে
আসতে
পারে।
তাই
প্রতিরোধের নিয়মগুলো মেনে
চলা
খুব
জরুরি।
প্রশ্ন ৪: দাদের স্থানে সাবান ব্যবহার করা যাবে?
উত্তর: হ্যাঁ, তবে
অ্যান্টিফাঙ্গাল বা
মেডিকেটেড সাবান
ব্যবহার করা
সবচেয়ে
ভালো।
সাধারণ
ক্ষারযুক্ত সাবান
ত্বককে
আরও
শুষ্ক
করে
তুলতে
পারে।
স্থানটি সবসময়
পরিষ্কার রাখুন।
প্রশ্ন ৫: দাদের চিকিৎসায় কোন খাবারগুলো এড়িয়ে চলা উচিত?
উত্তর: অতিরিক্ত চিনি
বা
মিষ্টি
জাতীয়
খাবার
ছত্রাকের বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করতে
পারে।
তাই
এই
সময়ে
অতিরিক্ত মিষ্টি,
প্রক্রিয়াজাত খাবার
এবং
অ্যালকোহল এড়িয়ে
চলা
ভালো।
সুষম
এবং
পুষ্টিকর খাবার
গ্রহণ
করুন।
শেষ কথা (Conclusion)
দাদ
একটি
সাধারণ
চর্মরোগ হলেও
এটি
যথেষ্ট
অস্বস্তিকর। সৌভাগ্যবশত, আমাদের
হাতের
কাছের
বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান
ব্যবহার করে
এর
কার্যকর চিকিৎসা করা
সম্ভব।
হলুদ,
নিম,
রসুন,
এবং
টি
ট্রি
অয়েলের
মতো
ঘরোয়া
প্রতিকারগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করলে
দাদের
সংক্রমণ থেকে
সহজেই
মুক্তি
পাওয়া
যায়।
তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা এবং সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রোধ করা। যদি ঘরোয়া উপায়ে কোনো উন্নতি না হয় বা সংক্রমণ গুরুতর আকার ধারণ করে, তাহলে দেরি না করে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চর্মরোগ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সুস্থ থাকুন, সচেতন থাকুন।