এলার্জি চুলকানি দূর করার ঘরোয়া উপায়: ১২টি অব্যর্থ প্রাকৃতিক সমাধান (আজই মুক্তি পান!)
এলার্জি চুলকানি দূর করার ঘরোয়া উপায়: ১২টি অব্যর্থ প্রাকৃতিক সমাধান (আজই মুক্তি পান!)
চুলকানি, র্যাশ, ত্বকের লালচে
ভাব
– এই
সমস্যাগুলো জীবনের
কোনো
না
কোনো
সময়ে
আমাদের
প্রায়
সবাইকেই ভুগিয়েছে। আর
এই
অস্বস্তির পেছনে
অন্যতম
প্রধান
কারণ
হলো
এলার্জি। ধুলোবালি, নির্দিষ্ট কোনো
খাবার,
পোকামাকড়ের কামড়
বা
আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে
হঠাৎ
করেই
শুরু
হতে
পারে
তীব্র
চুলকানি। এই
অবস্থায় স্বস্তি পেতে
আমরা
অনেকেই
দ্রুত
ফার্মেসিতে ছুটে
যাই
অ্যান্টি-এলার্জিক ট্যাবলেটের জন্য।
কিন্তু
আপনি
কি
জানেন,
আপনার
রান্নাঘর বা
বাড়ির
আঙিনাতেই এমন
অনেক
প্রাকৃতিক উপাদান
লুকিয়ে
আছে
যা
এই
বিরক্তিকর এলার্জি চুলকানি থেকে
আপনাকে
দ্রুত
মুক্তি
দিতে
পারে?
হ্যাঁ,
রাসায়নিক ঔষধের
উপর
নির্ভরতা কমানো
এবং
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন সমাধান
খোঁজা
মানুষের সংখ্যা
দিন
দিন
বাড়ছে।
এই
বিস্তারিত আর্টিকেলে আমরা
এলার্জি চুলকানি দূর
করার
সবচেয়ে কার্যকরী কিছু
ঘরোয়া
উপায়,
এলার্জি কেন
হয়,
এর
লক্ষণগুলো কী
এবং
কীভাবে
দীর্ঘমেয়াদে এই
সমস্যা
থেকে
দূরে
থাকা
যায়,
তা
নিয়ে
পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা
করব।
এলার্জি আসলে কী এবং কেন চুলকানি হয়?
(Understanding Allergic Itching)
সহজ
ভাষায়
বলতে
গেলে,
এলার্জি হলো
আমাদের
শরীরের
রোগ
প্রতিরোধ ব্যবস্থার (Immune System) একটি অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া। যখন
কোনো
বহিরাগত কিন্তু
সাধারণত নিরীহ
পদার্থ
(যাকে
'এলার্জেন' বলা
হয়)
আমাদের
শরীরে
প্রবেশ
করে,
তখন
ইমিউন
সিস্টেম তাকে
ক্ষতিকর শত্রু
ভেবে
ভুল
করে।
এর
বিরুদ্ধে লড়াই
করার
জন্য
শরীর
থেকে
'হিস্টামিন' (Histamine) নামক এক
ধরনের
রাসায়নিক নির্গত
হয়।
এই
হিস্টামিনের কারণেই
ত্বকের
রক্তনালীগুলো প্রসারিত হয়,
যার
ফলে
আক্রান্ত স্থানটি লাল
হয়ে
যায়,
ফুলে
ওঠে
এবং
তীব্র
চুলকানির অনুভূতি সৃষ্টি
হয়।
এই
অবস্থাকেই আমরা
এলার্জিক রিঅ্যাকশন বলি।
আমেরিকান একাডেমি অফ এলার্জি, অ্যাজমা অ্যান্ড
ইমিউনোলজি (AAAAI)
এর
মতে,
এলার্জি বিশ্বব্যাপী লক্ষ
লক্ষ
মানুষকে প্রভাবিত করে
এবং
এর
সঠিক
ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সাধারণ এলার্জেন বা এলার্জির কারণগুলো কী কী?
- পরিবেশগত: ধুলোর কণা (Dust Mites), ফুলের রেণু (Pollen), পশুর লোম বা খুশকি (Pet Dander)।
- খাবার: চিনাবাদাম, দুধ, ডিম, চিংড়ি মাছ, বেগুন, গরুর মাংস ইত্যাদি।
- পোকামাকড়ের
কামড়: মশা, মৌমাছি, বোলতা বা পিঁপড়ের কামড়।
- ঔষধ: কিছু অ্যান্টিবায়োটিক বা পেইনকিলার।
- রাসায়নিক
পদার্থ: ডিটারজেন্ট,
কসমেটিকস, পারফিউম বা মেটালের গয়না।
এলার্জি চুলকানি দূর করার সেরা ১২টি ঘরোয়া উপায়
এবার
চলুন
জেনে
নেওয়া
যাক,
কীভাবে
হাতের
কাছের
জিনিসপত্র ব্যবহার করে
এলার্জির চুলকানি থেকে
দ্রুত
ও
কার্যকরভাবে মুক্তি
পাওয়া
সম্ভব।
১. ঠান্ডা সেঁক বা কোল্ড কম্প্রেস
(Cold Compress)
চুলকানি কমানোর
সবচেয়ে সহজ,
দ্রুত
এবং
কার্যকর উপায়
হলো
ঠান্ডা
সেঁক
দেওয়া। ঠান্ডা
তাপমাত্রা ত্বকের
রক্তনালীকে সংকুচিত করে,
যা
হিস্টামিনের নিঃসরণ
কমিয়ে
দেয়।
ফলে
লালচে
ভাব,
ফোলা
এবং
চুলকানি দ্রুত
কমে
আসে।
ব্যবহারের পদ্ধতি:
- একটি পরিষ্কার,
নরম কাপড়ে কয়েক টুকরো বরফ জড়িয়ে নিন।
- এই কাপড়ের পুঁটলিটি
চুলকানির জায়গায় ১০-১৫ মিনিটের জন্য আলতো করে চেপে ধরে রাখুন।
- সরাসরি বরফ ত্বকে লাগাবেন না, এতে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে (ফ্রস্টবাইট)।
- দিনে বেশ কয়েকবার
এটি করতে পারেন। বরফ না থাকলে ঠান্ডা জলে কাপড় ভিজিয়েও সেঁক দিতে পারেন।
২. ওটমিল বাথ (Oatmeal Bath)
ওটমিল
শুধুমাত্র স্বাস্থ্যকর ব্রেকফাস্ট নয়,
এটি
ত্বকের
জন্যও
বিস্ময়করভাবে উপকারী। ওটমিলে
রয়েছে
অ্যাভেনানথ্রামাইডস (Avenanthramides) নামক অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি যৌগ,
যা
চুলকানি এবং
জ্বালাপোড়া কমাতে
অত্যন্ত কার্যকর।
ব্যবহারের পদ্ধতি:
- এক কাপ অপরিশোধিত
(uncooked) ওটস বা ওটমিল পাউডার করে নিন।
- এক বালতি বা বাথটাবের
হালকা গরম জলে এই পাউডারটি ভালোভাবে মিশিয়ে দিন। জল বেশি গরম যেন না হয়, কারণ গরম জল চুলকানি বাড়িয়ে তুলতে পারে।
- এই জলে ১৫-২০ মিনিট শরীর ডুবিয়ে রাখুন বা আক্রান্ত
স্থানটি ভিজিয়ে রাখুন।
- স্নান শেষে নরম তোয়ালে দিয়ে আলতো করে শরীর মুছে নিন, ঘষবেন না।
৩. বেকিং সোডা (Baking Soda)
বেকিং
সোডা
একটি
প্রাকৃতিক অ্যাসিড নিউট্রালাইজার হিসেবে
কাজ
করে।
এটি
ত্বকের
pH স্তরের
ভারসাম্য বজায়
রাখতে
সাহায্য করে
এবং
এলার্জির কারণে
সৃষ্ট
চুলকানি ও
র্যাশকে শান্ত করে।
ব্যবহারের পদ্ধতি:
- পেস্ট
তৈরি: ৪ চামচ বেকিং সোডার সাথে সামান্য জল মিশিয়ে একটি ঘন পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্টটি আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট রাখুন এবং তারপর ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- স্নানের
জন্য: এক বালতি জলে আধা কাপ বেকিং সোডা মিশিয়ে সেই জল দিয়ে স্নান করতে পারেন।
৪. নারকেল তেল (Coconut Oil)
নারকেল
তেলকে
'প্রকৃতির ময়েশ্চারাইজার' বলা
হয়।
এতে
থাকা
ফ্যাটি
অ্যাসিড, বিশেষ
করে
লরিক
অ্যাসিড, ত্বকের
আর্দ্রতা ধরে
রাখে
এবং
এর
অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ও
অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য চুলকানি কমায়
ও
সংক্রমণ প্রতিরোধ করে।
ব্যবহারের পদ্ধতি:
- খাঁটি ভার্জিন নারকেল তেল নিন।
- হাতের তালুতে সামান্য তেল নিয়ে আলতোভাবে
গরম করে নিন।
- এরপর চুলকানির
জায়গায় দিনে ২-৩ বার ম্যাসাজ করুন। এটি ত্বককে নরম রাখে এবং চুলকানির প্রবণতা কমায়।
৫. অ্যালোভেরা জেল (Aloe Vera Gel)
অ্যালোভেরা তার
শীতল
এবং
প্রশান্তিদায়ক গুণের
জন্য
সুপরিচিত। এতে
গ্লাইকোপ্রোটিন রয়েছে
যা
প্রদাহ
কমায়
এবং
পলিস্যাকারাইড যা
ত্বকের
কোষের
পুনর্গঠনে সাহায্য করে।
ব্যবহারের পদ্ধতি:
- একটি তাজা অ্যালোভেরা
পাতা থেকে সাবধানে জেল বের করে নিন।
- এই জেলটি সরাসরি চুলকানির
ওপর লাগান।
- ত্বক নিজে থেকেই জেলটি শোষণ করে নেবে, তাই ধোয়ার প্রয়োজন
নেই।
- তাত্ক্ষণিক
আরামের জন্য জেলটি ব্যবহারের আগে কিছুক্ষণ ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করে নিতে পারেন।
৬. নিম পাতা (Neem Leaves)
আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে নিমকে
'সর্বরোগহর' বা
সকল
রোগের
নিরাময়কারী বলা
হয়।
নিমের
অ্যান্টিহিস্টামিন, অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং
অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে,
যা
এলার্জি জনিত
চুলকানি এবং
র্যাশের জন্য একটি
অব্যর্থ প্রতিকার।
ব্যবহারের পদ্ধতি:
- এক মুঠো তাজা নিম পাতা ভালোভাবে
পিষে একটি পেস্ট তৈরি করুন।
- এই পেস্টটি আক্রান্ত
স্থানে ৩০ মিনিটের জন্য লাগিয়ে রাখুন, তারপর জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- বিকল্পভাবে,
নিম পাতা জলে ফুটিয়ে সেই জল ঠান্ডা করে স্নানের জলে মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন বা চুলকানির স্থানটি ধুতে পারেন।
৭. অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার (Apple Cider
Vinegar)
অ্যাপেল সাইডার
ভিনেগারে (ACV) অ্যাসিটিক অ্যাসিড থাকে,
যা
একটি
শক্তিশালী অ্যান্টিসেপটিক এবং
অ্যান্টি-ইচিং
এজেন্ট
হিসেবে
কাজ
করে।
এটি
শুষ্ক
এবং
চুলকানিযুক্ত ত্বকের
জন্য
বিশেষ
উপকারী।
ব্যবহারের পদ্ধতি:
- এক কাপ হালকা গরম জলে এক চামচ র' (Raw), অপরিশোধিত
অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার মেশান।
- একটি পরিষ্কার
কাপড় এই মিশ্রণে ভিজিয়ে চুলকানির জায়গায় লাগান।
- সতর্কতা: ত্বকে কাটা বা ক্ষত থাকলে ACV ব্যবহার করবেন না, কারণ এটি জ্বালা সৃষ্টি করতে পারে। সংবেদনশীল ত্বকের জন্য জলের পরিমাণ বাড়িয়ে মিশ্রণটি আরও হালকা করে নিন। Healthline এর মতো স্বাস্থ্য বিষয়ক সাইটগুলো ত্বকের সমস্যায় এর ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করেছে।
৮. তুলসী পাতা (Holy Basil/Tulsi)
তুলসী
পাতায়
রয়েছে
ইউজেনল
(Eugenol) নামক
একটি
যৌগ,
যা
চুলকানি এবং
প্রদাহ
কমাতে
সাহায্য করে।
এর
শক্তিশালী অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণও
ত্বককে
সংক্রমণ থেকে
রক্ষা
করে।
ব্যবহারের পদ্ধতি:
- কয়েকটি তুলসী পাতা ভালোভাবে
ধুয়ে পিষে নিন।
- এই পেস্টটি সরাসরি চুলকানির
জায়গায় লাগান।
- বিকল্পভাবে,
কয়েকটি তুলসী পাতা এক কাপ জলে ফুটিয়ে চা তৈরি করে পান করতে পারেন, যা ভেতর থেকে এলার্জির বিরুদ্ধে কাজ করবে।
৯. ক্যামোমাইল চা (Chamomile Tea)
ক্যামোমাইল তার
শান্তিদায়ক এবং
অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণের
জন্য
পরিচিত। এতে
থাকা
অ্যাপিজেনিন এবং
বিসাবোলল নামক
উপাদান
হিস্টামিনের নিঃসরণ
কমাতে
সাহায্য করে।
ব্যবহারের পদ্ধতি:
- একটি ক্যামোমাইল
টি-ব্যাগ গরম জলে কয়েক মিনিট ডুবিয়ে রাখুন।
- টি-ব্যাগটি তুলে ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করুন।
- এই ঠান্ডা টি-ব্যাগটি চুলকানির
জায়গায় ১০-১৫ মিনিট ধরে রাখুন। এটি দ্রুত আরাম দেবে।
১০. ধনে পাতা (Coriander Leaves)
অনেকেই
জানেন
না
যে
ধনে
পাতা
এলার্জি চুলকানি কমাতে
পারে।
এর
মধ্যে
অ্যান্টিহিস্টামিন বৈশিষ্ট্য রয়েছে
যা
চুলকানি এবং
আমবাত
(Hives) কমাতে
কার্যকর।
ব্যবহারের পদ্ধতি:
- এক মুঠো ধনে পাতা পিষে একটি পেস্ট তৈরি করুন।
- এই পেস্টটি আক্রান্ত
স্থানে ১৫-২০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন।
- এছাড়াও, ধনে পাতার রস তৈরি করে এক চামচ মধুর সাথে মিশিয়ে দিনে দুবার পান করতে পারেন।
১১. পেপারমিন্ট অয়েল (Peppermint Oil)
পেপারমিন্টে থাকা
মেন্থল
একটি
শীতল
অনুভূতি প্রদান
করে
যা
চুলকানি থেকে
তাৎক্ষণিক মুক্তি
দেয়।
ব্যবহারের পদ্ধতি:
- পেপারমিন্ট
অয়েল খুবই শক্তিশালী, তাই এটি সরাসরি ব্যবহার করা উচিত নয়।
- এক চামচ নারকেল তেল বা অলিভ অয়েলের সাথে ১-২ ফোঁটা পেপারমিন্ট অয়েল মেশান।
- এই মিশ্রণটি
আলতো করে চুলকানির জায়গায় লাগান।
১২. সঠিক খাদ্যাভ্যাস
কিছু
খাবার
এলার্জির বিরুদ্ধে লড়াই
করতে
সাহায্য করে।
ভিটামিন সি
সমৃদ্ধ
খাবার
(যেমন
- লেবু,
আমলকী,
পেয়ারা) প্রাকৃতিক অ্যান্টিহিস্টামিন হিসেবে
কাজ
করে।
এছাড়া
কোয়ার্সেটিন (Quercetin) সমৃদ্ধ খাবার
যেমন
- পেঁয়াজ, আপেল
এবং
বেরি
এলার্জির প্রতিক্রিয়া কমাতে
সাহায্য করে।
এলার্জি চুলকানি প্রতিরোধের উপায় (Prevention is Key)
বারবার
এলার্জির সমস্যায় ভোগার
চেয়ে
এটি
প্রতিরোধ করা
অনেক
বেশি
বুদ্ধিমানের কাজ।
নিচে
কিছু
জরুরি
টিপস
দেওয়া
হলো:
- এলার্জেন
শনাক্ত করুন: কোন জিনিসে আপনার এলার্জি হচ্ছে তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে
এলার্জি টেস্ট করাতে পারেন।
- ঘরবাড়ি
পরিষ্কার রাখুন: নিয়মিত ঘর ঝাড়ু দিন এবং ভ্যাকুয়াম
ক্লিনার ব্যবহার করুন। বিছানার চাদর, বালিশের কভার এবং পর্দা গরম জলে ধুয়ে ফেলুন।
- সঠিক
পোশাক পরুন: সুতির এবং ঢিলেঢালা
পোশাক পরুন যা ত্বকে বাতাস চলাচল করতে সাহায্য করে। সিন্থেটিক বা আঁটসাঁট পোশাক এড়িয়ে চলুন।
- খাদ্যাভ্যাসে
মনোযোগ দিন: যে খাবারে এলার্জি হয় তা এড়িয়ে চলুন। একটি ফুড ডায়েরি রাখতে পারেন।
- ত্বককে
আর্দ্র রাখুন: শুষ্ক ত্বক চুলকানির
প্রবণতা বাড়ায়। তাই নিয়মিত ভালো মানের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন, বিশেষ করে স্নানের পর।
- মানসিক চাপ কমান: মানসিক চাপ এলার্জির সমস্যা বাড়িয়ে তুলতে পারে। যোগব্যায়াম, ধ্যান বা হালকা ব্যায়াম করে নিজেকে চাপমুক্ত রাখুন।
কখন অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন?
ঘরোয়া
প্রতিকারগুলো প্রাথমিক এবং
হালকা
চুলকানির জন্য
চমৎকার
কাজ
করে।
তবে
নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো দেখা
দিলে
একদম
দেরি
না
করে
চিকিৎসকের কাছে
যাওয়া
উচিত:
- তীব্র
শ্বাসকষ্ট বা বুকে চাপ অনুভব করলে।
- মুখ,
ঠোঁট বা গলা ফুলে গেলে।
- চুলকানির
সাথে মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হলে।
- সম্পূর্ণ
শরীরে র্যাশ ছড়িয়ে পড়লে।
- ঘরোয়া
প্রতিকার ব্যবহারের পরও অবস্থার কোনো উন্নতি না হলে বা আরও খারাপ হলে।
- আক্রান্ত
স্থানে সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিলে (যেমন - পুঁজ, অতিরিক্ত ব্যথা)।
এই লক্ষণগুলো অ্যানাফাইল্যাক্সিস (Anaphylaxis) নামক একটি গুরুতর এলার্জিক রিঅ্যাকশনের ইঙ্গিত হতে পারে, যার জন্য জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। Mayo Clinic এর ওয়েবসাইটে এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য রয়েছে।
সাধারণ জিজ্ঞাসা (Frequently Asked
Questions - FAQ)
প্রশ্ন ১: এলার্জি চুলকানিতে কি সাবান ব্যবহার করা নিরাপদ?
উত্তর: ক্ষারযুক্ত এবং
সুগন্ধিযুক্ত সাবান
ত্বককে
আরও
শুষ্ক
ও
খিটখিটে করে
তুলতে
পারে।
এর
পরিবর্তে, ময়েশ্চারাইজারযুক্ত, মৃদু
এবং
হাইপোঅ্যালার্জেনিক (hypoallergenic) সাবান বা
বডি
ওয়াশ
ব্যবহার করা
ভালো।
প্রশ্ন ২: ঘরোয়া প্রতিকার ব্যবহার করলে চুলকানি কমতে কত সময় লাগে?
উত্তর: এটি নির্ভর
করে
চুলকানির তীব্রতা এবং
ব্যবহৃত প্রতিকারের উপর।
কোল্ড
কম্প্রেস বা
অ্যালোভেরার মতো
প্রতিকারগুলো তাৎক্ষণিক আরাম
দেয়।
তবে
সম্পূর্ণভাবে সারতে
কয়েক
ঘন্টা
থেকে
কয়েক
দিন
সময়
লাগতে
পারে।
প্রশ্ন ৩: এলার্জি কি পুরোপুরি নিরাময়যোগ্য?
উত্তর: বেশিরভাগ এলার্জি পুরোপুরি নিরাময় করা
কঠিন,
তবে
সঠিক
ব্যবস্থাপনা এবং
প্রতিরোধের মাধ্যমে এর
লক্ষণগুলো নিয়ন্ত্রণ করা
সম্ভব।
ইমিউনোথেরাপির মতো
কিছু
আধুনিক
চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদী সমাধান
দিতে
পারে,
যার
জন্য
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ প্রয়োজন।
প্রশ্ন ৪: রাতে চুলকানি বেড়ে যায় কেন?
উত্তর: রাতে শরীরের
তাপমাত্রা স্বাভাবিকভাবে কিছুটা
বাড়ে
এবং
শরীর
থেকে
জল
কমার
হারও
বেশি
থাকে,
যা
ত্বককে
শুষ্ক
করে
তোলে।
এছাড়া,
দিনের
বেলার
ব্যস্ততা না
থাকায়
মনোযোগ
চুলকানির দিকে
বেশি
যায়।
এই
কারণগুলোতে রাতে
চুলকানি বেশি
অনুভূত
হয়।
প্রশ্ন ৫: মানসিক চাপের সাথে কি এলার্জির সম্পর্ক আছে?
উত্তর: হ্যাঁ, গভীর
সম্পর্ক রয়েছে। মানসিক
চাপ
বা
স্ট্রেস শরীরকে
কর্টিসল (Cortisol) নামক হরমোন
নিঃসরণ
করতে
বাধ্য
করে,
যা
ইমিউন
সিস্টেমকে প্রভাবিত করে
এবং
হিস্টামিনের নিঃসরণ
বাড়িয়ে দেয়।
ফলে
এলার্জির লক্ষণ
এবং
চুলকানি মারাত্মকভাবে বেড়ে
যেতে
পারে।
শেষ কথা
এলার্জি চুলকানি নিঃসন্দেহে একটি
যন্ত্রণাদায়ক অভিজ্ঞতা। কিন্তু
সঠিক
জ্ঞান
এবং
কিছু
সহজ
ঘরোয়া
প্রতিকারের সাহায্যে আপনি
এই
অস্বস্তি থেকে
সহজেই
মুক্তি
পেতে
পারেন।
এই
আর্টিকেলে আলোচিত
উপায়গুলো প্রাকৃতিক এবং
নিরাপদ,
তবে
মনে
রাখবেন,
প্রত্যেকের ত্বকের
ধরন
আলাদা।
তাই
কোনো
উপাদান
ব্যবহারের আগে
ত্বকের
অল্প
অংশে
পরীক্ষা (প্যাচ
টেস্ট)
করে
নেওয়া
ভালো।
সবচেয়ে বড় কথা, প্রতিরোধের উপর জোর দিন। আপনার এলার্জির কারণগুলো জানুন এবং সেগুলো থেকে দূরে থাকুন। একটি স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ আপনাকে এলার্জির সমস্যা থেকে দীর্ঘমেয়াদে সুরক্ষিত রাখবে। যদি সমস্যা গুরুতর হয়, তবে সংকোচ না করে চিকিৎসকের সাহায্য নিন। আপনার সুস্থতাই সর্বাগ্রে।