জ্বর হলে কি খাওয়া উচিত: সুস্থতার সেরা খাদ্যসমূহ
জ্বর হলে হালকা খাবার ও প্রচুর পানি খাওয়া উচিত। ফল, সবজি ও স্যুপ শরীরের জন্য ভালো। জ্বর হলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
হালকা খাবার যেমন ভাত, দই, স্যুপ ও ফলের রস সহজে হজম হয় এবং শক্তি জোগায়। প্রচুর পানি পান করা শরীরের জলীয় অংশ বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং জ্বরের কারণে হওয়া ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করে।
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল যেমন কমলালেবু, কিউই, এবং পেয়ারা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তাজা সবজি ও স্যুপ শরীরকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে। সুতরাং, জ্বর হলে পুষ্টিকর ও হালকা খাবার খাওয়ার দিকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

Credit: www.youtube.com
জ্বরের সময় পুষ্টির গুরুত্ব
জ্বরের সময় পুষ্টির গুরুত্ব অপরিসীম। শরীর তখন নানা ধরনের চাপের মধ্যে থাকে। সঠিক পুষ্টি শরীরকে দ্রুত সেরে ওঠার জন্য সাহায্য করে।
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
জ্বরের সময় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। এই সময়ে ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি এবং জিঙ্ক যুক্ত খাবার খাওয়া উচিত।
- কমলালেবু
- লেবু
- আমলকী
- ডিম
- মাছ
এগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
শক্তি পুনরুদ্ধার
জ্বরের সময় শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। এই সময়ে কার্বোহাইড্রেট ও প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত।
| খাবারের নাম | পুষ্টিগুণ |
|---|---|
| ভাত | কার্বোহাইড্রেট |
| ডাল | প্রোটিন |
| সবজি | ভিটামিন ও মিনারেল |
| মুরগির মাংস | প্রোটিন |
জ্বরের সময় পানীয়
জ্বর হলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং পানির চাহিদা বেড়ে যায়। জ্বরের সময় সঠিক পানীয় গ্রহণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক পানীয় শরীরকে পুনরুদ্ধার করতে সহায়তা করে এবং ডিহাইড্রেশন থেকে রক্ষা করে। এখানে কিছু পানীয়ের কথা বলা হলো যা জ্বরের সময় উপকারী।
পানি ও ইলেক্ট্রোলাইট
পানি জ্বরের সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পানীয়। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা উচিত। এটি শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে এবং টক্সিন দূর করে। দিনে কমপক্ষে ৮ গ্লাস পানি পান করুন।
ইলেক্ট্রোলাইট সমৃদ্ধ পানীয়, যেমন ওআরএস বা স্পোর্টস ড্রিঙ্কস, শরীরে লবণ ও খনিজ পুনরুদ্ধারে সহায়তা করে। এটি শরীরের ইলেক্ট্রোলাইট ব্যালেন্স বজায় রাখে।
গরম চা ও স্যুপ
গরম চা জ্বরের সময় গলা ব্যথা ও কাশি কমাতে সাহায্য করে। গ্রীন টি এবং হেরবাল টি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়া, মধু ও আদা দিয়ে তৈরি চা খুবই উপকারী।
স্যুপ জ্বরের সময় খুবই পুষ্টিকর। এটি শরীরকে উষ্ণ রাখে এবং পুষ্টি জোগায়। চিকেন স্যুপ, সবজি স্যুপ এবং লেন্স স্যুপ খুবই উপকারী।
| পানীয় | উপকারিতা |
|---|---|
| পানি | ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ |
| ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিঙ্ক | লবণ ও খনিজ পুনরুদ্ধার |
| গ্রীন টি | রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি |
| চিকেন স্যুপ | পুষ্টি জোগায় |
প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার
জ্বর হলে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রোটিন আমাদের শরীরের মাংসপেশী গঠনে সাহায্য করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। নিচে কিছু প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার নিয়ে আলোচনা করা হলো।
ডাল ও মসুর
ডাল ও মসুর প্রোটিনের চমৎকার উৎস। এগুলো সহজে হজম হয়। ডাল ও মসুর বিভিন্ন ধরনের খাদ্য হিসেবে খাওয়া যায়। যেমন, ডালের স্যুপ, ডাল ভাজা, মসুর ডাল ইত্যাদি।
| খাবারের নাম | প্রোটিন পরিমাণ (প্রতি ১০০ গ্রাম) |
|---|---|
| মসুর ডাল | ৯ গ্রাম |
| মুগ ডাল | ৭ গ্রাম |
| ছোলার ডাল | ৮ গ্রাম |
মাছ ও মুরগি
মাছ ও মুরগির মাংস প্রোটিনের ভালো উৎস। এগুলো শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় এমিনো অ্যাসিড সরবরাহ করে। মাছ এবং মুরগির মাংস দ্রুত শক্তি প্রদান করে।
- মাছের নাম: ইলিশ, রুই, কাতলা
- প্রোটিন পরিমাণ: ১৫-২২ গ্রাম প্রতি ১০০ গ্রাম
- মুরগির মাংস: সাদা মাংস, লাল মাংস
- প্রোটিন পরিমাণ: ২৩ গ্রাম প্রতি ১০০ গ্রাম
প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার শরীরের গঠন ও রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। সঠিক প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করে সুস্থ থাকুন।

Credit: www.jugantor.com
ফল ও সবজি
জ্বর হলে ফল ও সবজি খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। বিশেষ করে ভিটামিন সমৃদ্ধ ফল ও সবজি খেলে দ্রুত সেরে ওঠা সম্ভব।
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল
ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তাই জ্বর হলে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল খেতে হবে।
- কমলা: কমলাতে প্রচুর ভিটামিন সি আছে। এটি শরীরকে ঠান্ডা রাখে।
- লেবু: লেবুতে ভিটামিন সি আছে। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
- আমলকি: আমলকিতে ভিটামিন সি আছে। এটি শরীরকে শক্তি দেয়।
সবুজ শাকসবজি
সবুজ শাকসবজি শরীরকে রোগমুক্ত রাখতে সাহায্য করে। এতে প্রচুর পুষ্টি উপাদান থাকে।
- পালং শাক: পালং শাকে আয়রন ও ভিটামিন এ আছে। এটি শরীরকে শক্তি দেয়।
- মুলা শাক: মুলা শাকে ভিটামিন সি ও ক্যালসিয়াম আছে। এটি হাড় মজবুত করে।
- লাউ শাক: লাউ শাকে প্রচুর পানি ও ফাইবার আছে। এটি শরীরের পানির অভাব পূরণ করে।
কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার
জ্বর হলে শরীর দুর্বল হয়ে যায়। তখন কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া খুবই জরুরি। কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার শরীরকে শক্তি যোগায়। এ ধরনের খাবার সহজে হজম হয়। ফলে দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠা সম্ভব। নিচে কিছু কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার নিয়ে আলোচনা করা হলো।
ভাত ও রুটি
ভাত ও রুটি সহজে হজম হয়। এগুলো শরীরে পর্যাপ্ত শক্তি যোগায়। ভাতে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট রয়েছে। রুটি অনেক সময় ভাতের বিকল্প হিসেবে খাওয়া যায়। এই খাবারগুলো জ্বরের সময় খাওয়া খুবই উপকারী।
ওটমিল ও পাস্তা
ওটমিল প্রচুর ফাইবার এবং কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ। এটি সহজে হজম হয়। জ্বরের সময় ওটমিল খেলে দ্রুত শক্তি পাওয়া যায়।
পাস্তা সহজে রান্না হয়। এটি শরীরে কার্বোহাইড্রেট যোগায়। জ্বর হলে পাস্তা একটি ভালো বিকল্প। পাস্তায় অনেক পুষ্টি উপাদান রয়েছে।
দুগ্ধজাত খাবার
জ্বর হলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। এজন্য সঠিক খাবার খাওয়া খুব জরুরি। দুগ্ধজাত খাবার এসময় খুব উপকারী হতে পারে। এতে রয়েছে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান।
দুধ ও দই
দুধ ও দই জ্বরের সময় খাওয়া খুবই উপকারী। দুধে প্রচুর ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি রয়েছে। এটি হাড়কে শক্তিশালী করে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়া, দইয়ে রয়েছে প্রোবায়োটিক যা হজমশক্তি উন্নত করে।
- দুধে প্রোটিন এবং ক্যালসিয়াম রয়েছে।
- দই হজমশক্তি ভালো করে।
- দুধ ও দই সহজে হজম হয়।
পনির ও ছানা
পনির ও ছানা দুগ্ধজাত খাবারের মধ্যে অন্যতম। পনিরে রয়েছে প্রচুর প্রোটিন। এটি শরীরকে শক্তি যোগায়। ছানাও প্রোটিনের ভালো উৎস। এটি হজমে সহায়তা করে এবং শরীরে পুষ্টি সরবরাহ করে।
- পনিরে প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম রয়েছে।
- ছানায় প্রোটিন প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়।
- পনির ও ছানা সহজে হজম হয়।
মশলাদার ও চর্বিযুক্ত খাবার এড়ানো
জ্বর হলে শরীর অত্যন্ত দুর্বল হয়ে যায়। এই সময়ে খাদ্যাভ্যাসে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। মশলাদার ও চর্বিযুক্ত খাবার জ্বরের সময় শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই এই ধরনের খাবার এড়িয়ে চলা বাঞ্ছনীয়।
মশলাদার খাবার এড়ানোর কারণ
মশলাদার খাবার হজমে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। জ্বরের সময় পেটের সমস্যা হলে শরীরের অবস্থা আরো খারাপ হতে পারে।
- পেটের অস্বস্তি বৃদ্ধি - মশলাদার খাবার পেটের অস্বস্তি বাড়ায়।
- হজমে সমস্যা - জ্বরের সময় হজম প্রক্রিয়া ধীর হয়। মশলাদার খাবার হজমে অসুবিধা সৃষ্টি করে।
- অতিরিক্ত ঘাম - মশলাদার খাবার খেলে ঘাম বেশি হয়। এতে শরীরের পানি বেরিয়ে যায়।
চর্বিযুক্ত খাবার কেন এড়ানো উচিত
চর্বিযুক্ত খাবার জ্বরের সময় শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এটি হজমে সমস্যা সৃষ্টি করে এবং শরীরের অতিরিক্ত ক্যালোরি যোগ করে।
- ওজন বৃদ্ধি - চর্বিযুক্ত খাবার ওজন বাড়ায়।
- হজম প্রক্রিয়া ধীর - চর্বিযুক্ত খাবার হজম হতে সময় নেয়।
- শরীরের অতিরিক্ত তেল - চর্বিযুক্ত খাবার শরীরের তেল বাড়ায়।
জ্বরের সময় মশলাদার ও চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা অত্যন্ত জরুরি। এই ধরনের খাবার খেলে শরীরের অবস্থা আরো খারাপ হতে পারে।

Credit: bangla.aajtak.in
জ্বরের সময় খাদ্যাভ্যাসের সাধারণ নিয়ম
জ্বর হলে শরীর দুর্বল হয়ে যায়। তাই খাদ্যাভ্যাসে কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চলা উচিত। সঠিক খাদ্যাভ্যাস জ্বরের সময় শরীরকে দ্রুত সেরে উঠতে সাহায্য করে। নিচে জ্বরের সময় খাদ্যাভ্যাসের কয়েকটি সাধারণ নিয়ম দেওয়া হলো:
ছোট ছোট খাবার গ্রহণ
জ্বরের সময় বড় বড় খাবার না খেয়ে ছোট ছোট খাবার গ্রহণ করা উচিত। এতে খাবার সহজে হজম হয় এবং শরীরের শক্তি বজায় থাকে। নিচে কিছু ছোট ছোট খাবারের উদাহরণ দেওয়া হলো:
- সুপ
- ফলমূল
- দই
- চিঁড়া
নিয়মিত খাবার গ্রহণ
জ্বরের সময় নিয়মিত খাবার গ্রহণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতে শরীরের শক্তি বজায় থাকে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। নিচে নিয়মিত খাবারের কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হলো:
| খাবার | সময় |
|---|---|
| সকালের নাস্তা | সকাল ৮:০০ |
| দুপুরের খাবার | দুপুর ১:০০ |
| বিকেলের নাস্তা | বিকেল ৪:০০ |
| রাতের খাবার | রাত ৮:০০ |
Frequently Asked Questions
জ্বর হলে কি কি খাবার খাওয়া যাবে না?
জ্বর হলে মশলাদার খাবার, ভাজা-পোড়া, ঠান্ডা পানীয় ও ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলা উচিত। হালকা ও সহজপাচ্য খাবার খাওয়া ভালো।
জ্বরের মধ্যে কি মধু খাওয়া যাবে?
জ্বরের মধ্যে মধু খাওয়া যাবে। মধু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং গলা ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। তবে, অতিরিক্ত খাওয়া এড়িয়ে চলুন।
জ্বর হলে কি ওষুধ খেতে হবে?
জ্বর হলে প্যারাসিটামল ওষুধ খেতে পারেন। তবে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। প্রচুর পানি পান করুন এবং বিশ্রাম নিন।
জ্বর হলে দুধ খেলে কি হয়?
জ্বর হলে দুধ খেলে কোনো ক্ষতি হয় না। দুধ শরীরে পুষ্টি যোগায় এবং হাইড্রেটেড থাকতে সহায়তা করে। তবে, হালকা গরম দুধ খাওয়া ভালো।
Conclusion
জ্বর হলে সঠিক খাবার খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পর্যাপ্ত জল পান করুন এবং পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন। হালকা ও সহজপাচ্য খাবার বেছে নিন। শাকসবজি, ফল, স্যুপ এবং তরল খাবার উপকারী। সুস্থ থাকতে খাদ্যাভ্যাসে যত্ন নিন। সঠিক খাবার দ্রুত আরোগ্য এনে দেবে। সুস্থ থাকুন, সতর্ক থাকুন।