চিকুনগুনিয়া রোগের কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার: এই মশা-বাহিত রোগ থেকে বাঁচার উপায়


 🦟 চিকুনগুনিয়া রোগের কারণ, লক্ষণ প্রতিকার: এই মশা-বাহিত রোগ থেকে বাঁচার উপায়



ভূমিকা: চিকুনগুনিয়া কি?

স্বাস্থ্যগত উদ্বেগের মধ্যে যে মশাবাহিত রোগটি বারবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, তার মধ্যে অন্যতম হল চিকুনগুনিয়া (Chikungunya) এটি এমন একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যার নাম শুনলেই শরীরে এক অসহনীয় গাঁটের ব্যথার ছবি ভেসে ওঠে। কিমাকোন্ডে ভাষা থেকে আসাচিকুনগুন্যাশব্দের অর্থই হলো "বিকৃত হয়ে যাওয়া" বা "কুঁকড়ে যাওয়া", যা রোগের প্রধান লক্ষণতীব্র জয়েন্ট ব্যথাকে সূচিত করে।

হঠাৎ উচ্চ মাত্রার জ্বর এবং তীব্র, দীর্ঘস্থায়ী অস্থিসন্ধির ব্যথা এই রোগের মূল বৈশিষ্ট্য। যদিও চিকুনগুনিয়া সচরাচর প্রাণঘাতী নয়, তবুও এর ফলে সৃষ্ট শারীরিক দুর্বলতা এবং দীর্ঘমেয়াদী ব্যথা রোগীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত করে। সঠিক সময়ে রোগের কারণ, লক্ষণ প্রতিকার সম্পর্কে জানা থাকলে এই নীরব ঘাতক থেকে নিজেকে এবং পরিবারকে সুরক্ষিত রাখা সম্ভব।

এই বিস্তারিত ব্লগ পোস্টে আমরা চিকুনগুনিয়া ভাইরাসের উৎস, সংক্রমণের বিস্তারিত প্রক্রিয়া, ডেঙ্গুর সাথে এর মূল পার্থক্য এবং এই রোগ থেকে মুক্তির জন্য কার্যকরী প্রতিকার প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করব।

চিকুনগুনিয়া ভাইরাসের পরিচিতি উৎপত্তি (চিকুনগুনিয়া কি?)

চিকুনগুনিয়া হলো চিকুনগুনিয়া ভাইরাস (CHIKV) দ্বারা সৃষ্ট একটি ভাইরাসজনিত রোগ। এটি আলফাভাইরাস (Alphavirus) গণের অন্তর্গত।

  • সংজ্ঞা প্রকৃতি (চিকুনগুনিয়া কি ধরনের রোগ): এটি একটি জুনোটিক রোগ, যার অর্থ হলো ভাইরাসটি প্রাথমিকভাবে কিছু প্রাণী (যেমন বানর) থেকে মশার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ছড়ায়। চিকুনগুনিয়াকে সাধারণত তীব্র কিন্তু কম মারাত্মক রোগ হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়। এই রোগের মূল প্রভাব অস্থিসন্ধিতে পড়ে।
  • রোগের ইতিহাস: ১৯৫২ সালে তানজানিয়া এবং মোজাম্বিকের সীমান্তে একটি প্রাদুর্ভাবের সময় এই রোগটি প্রথম নথিভুক্ত করা হয়। গত কয়েক দশকে এটি আফ্রিকা, এশিয়া, ইউরোপ এবং আমেরিকা মহাদেশের ১১৯টিরও বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) বর্তমানে এটিকে একটি বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ঝুঁকি হিসেবে দেখছে।

চিকুনগুনিয়া রোগের মূল কারণ সংক্রমণ প্রক্রিয়া (চিকুনগুনিয়া রোগের কারণ)

চিকুনগুনিয়া ভাইরাস মানবদেহে প্রবেশের একমাত্র বাহক হলো বিশেষ প্রজাতির মশা।

বাহক মশা: এডিস প্রজাতি

চিকুনগুনিয়া ভাইরাসের প্রধান বাহক হলো এডিস মশার দুটি প্রজাতি:

  • ১. এডিস ইজিপ্টি (Aedes aegypti):

    • এই মশাটি 'হলুদ জ্বর মশা' নামেও পরিচিত।
    • এরা সাধারণত শহরাঞ্চলে, বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার স্থির জলে বংশবৃদ্ধি করে।

  • ২. এডিস অ্যালবোপিকটাস (Aedes albopictus):
    • 'এশিয়ান টাইগার মশা' নামে পরিচিত এই প্রজাতি শহুরে, উপশহুরে এবং গ্রামীণ সব পরিবেশেই বংশ বিস্তার করতে পারে।
    • এই মশা একই সাথে ডেঙ্গু জিকা ভাইরাসও বহন করে।



সংক্রমণের চক্র:

  • ভাইরাস গ্রহণ: একটি সুস্থ এডিস মশা যখন চিকুনগুনিয়া ভাইরাসে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তিকে (যার রক্তে ভাইরাসের পরিমাণ বেশি - ভাইরেমিয়া) কামড়ায়, তখন মশাটি ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হয়।
  • ভাইরাসের বংশবৃদ্ধি: মশার দেহে ভাইরাসটি বংশবৃদ্ধি করে এবং মশার লালাগ্রন্থিতে জমা হয়।
  • সংক্রমণ: পরবর্তীতে এই সংক্রমিত মশাটি যখন অন্য কোনো সুস্থ ব্যক্তিকে কামড়ায়, তখন কামড়ানোর সময় লালার মাধ্যমে ভাইরাসটি সেই ব্যক্তির রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করে রোগ সৃষ্টি করে।

চিকুনগুনিয়া রোগের বিস্তারিত লক্ষণ

সংক্রামিত মশা কামড়ানোর প্রায় থেকে ১২ দিন পর (গড়ে থেকে দিন) চিকুনগুনিয়া রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। এই সময়কালকে ইনকিউবেশন পিরিয়ড বলা হয়।



. প্রধান স্বতন্ত্র লক্ষণসমূহ:

  • তীব্র জ্বর (High Fever): হঠাৎ করে ১০২°ফা থেকে ১০৪°ফা (৪০°সে) পর্যন্ত উচ্চ মাত্রার জ্বর আসে, যা সাধারণত থেকে দিন স্থায়ী হয় এবং হঠাৎ করে নেমে যায়।
  • অসহনীয় গাঁটের ব্যথা (Severe Arthralgia): এটি চিকুনগুনিয়ার সবচেয়ে পরিচিত এবং স্বতন্ত্র লক্ষণ। এই ব্যথা সাধারণত একাধিক জয়েন্টকে (Polyarthralgia) প্রভাবিত করেবিশেষ করে কবজি, গোড়ালি, হাঁটু এবং হাত-পায়ের ছোট ছোট জয়েন্টগুলোতে।
    • ব্যথা এতটাই তীব্র হতে পারে যে রোগী নড়াচড়া করতে পারেন না।
    • এই ব্যথা রোগের প্রাথমিক উপসর্গ সেরে যাওয়ার পরও কয়েক মাস বা এমনকি বছর ধরে চলতে পারে (ক্রনিক আর্থ্রালজিয়া)
  • ফুসকুড়ি (Rash): প্রায় ৫০% রোগীর ক্ষেত্রে ত্বকে ফুসকুড়ি দেখা যায়। এটি সাধারণত ছোট, লালচে দাগের মতো হয় এবং শরীরের কাণ্ড অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে দেখা যেতে পারে। এই ফুসকুড়ি রোগের শুরুতেই বা জ্বর কমে যাওয়ার - দিন পর দেখা দিতে পারে।

. অন্যান্য সাধারণ লক্ষণ:

  • পেশী ব্যথা (Myalgia): শরীরের বিভিন্ন পেশীতে তীব্র ব্যথা জড়তা অনুভব হয়।
  • তীব্র মাথাব্যথা (Severe Headache): কপালে বা চোখের পিছনে তীব্র ব্যথা।
  • ক্লান্তি দুর্বলতা (Extreme Fatigue): রোগীরা চরম শারীরিক দুর্বলতা অনুভব করেন, যা আরোগ্য লাভের পরেও কিছুদিন স্থায়ী হতে পারে।
  • বমি বমি ভাব (Nausea): হজমজনিত সমস্যা বা বমি ভাব দেখা দিতে পারে।
  • চোখে লালচে ভাব: কিছু ক্ষেত্রে কনজাংটিভাইটিস (Conjunctivitis) বা চোখ লাল হয়ে যাওয়া দেখা যেতে পারে। (দেখুন FAQ)

ডেঙ্গু চিকুনগুনিয়া: পার্থক্য নির্ণয় (ডেঙ্গু চিকুনগুনিয়া পার্থক্য)

চিকুনগুনিয়া এবং ডেঙ্গু উভয়ই একই মশা (এডিস) দ্বারা ছড়ায় বলে এদের লক্ষণগুলোতে অনেক মিল থাকে, ফলে রোগ নির্ণয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে। তবে কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে:

বিষয়

চিকুনগুনিয়া

ডেঙ্গু

প্রধান উপসর্গ

জ্বর + ভয়ংকর জয়েন্ট-ব্যথা

জ্বর + তীব্র মাথাব্যথা + রক্তস্বল্পতা/রক্তপাত হতে পারে

ব্যথার প্রকৃতি

জয়েন্ট-ব্যথা অত্যাধিক, চলাচল বাধাপ্রাপ্ত করে

জয়েন্ট-ব্যথা কম তবে অন্য উপসর্গ বেশি

রক্তপাতের ঝুঁকি

সাধারণত কম

রক্তপাত, প্লেটলেট স্বল্পতা বেশি হয়

চিকিৎসা পদ্ধতি

কোনো নির্দিষ্ট ওষুধ নেইসমর্থনমূলক চিকিৎসা

দ্রুত শনাক্ত চিকিৎসা প্রয়োজন, রক্ত-বাড়তি রাখার মতো বিষয় গুরুত্ব পায়

ভাইরাস

CHIKV

DENV (ডেঙ্গু ভাইরাস)

মশার ধরন

Aedes aegypti / albopictus

একই মশা প্রজাতি

পুনরায় সংক্রমণের সম্ভাবনা

একবার হলে সাধারণত পুনরায় হয় না (রোগ-প্রতিরোধকতা পাওয়া যেতে পারে)

একাধিক ধরণের ভাইরাস থাকায় পুনরায় সংক্রমণ হতে পারে

 

 

 

 

 

 

এই পার্থক্যগুলো জানা জরুরিকারণ দ্রুত শনাক্ত  উপযুক্ত ব্যবস্থাপনা সময়মতো নিলে চিকিৎসার ফলাফল ভালো হয়।

 

 


 

 


 

 

 

চিকুনগুনিয়া রোগের প্রতিকার  চিকিৎসা (চিকুনগুনিয়া রোগের প্রতিকার)



চিকুনগুনিয়া ভাইরাসের জন্য নির্দিষ্ট কোনো নিরাময়কারী অ্যান্টি-ভাইরাল ঔষধ নেই। চিকিৎসা সম্পূর্ণরূপে লক্ষণভিত্তিক (Symptomatic) এবং রোগীর কষ্ট উপশমের উপর লক্ষ্য রাখা হয়।

বিশ্রাম  হাইড্রেশন:

  • পর্যাপ্ত বিশ্রাম: দ্রুত আরোগ্যের জন্য শরীরকে পূর্ণ বিশ্রাম দেওয়া অপরিহার্য।
  • প্রচুর তরল গ্রহণ: উচ্চ জ্বর এবং শারীরিক দুর্বলতা ডিহাইড্রেশন ঘটাতে পারে। তাই প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ জলডাবের জলফলের রস এবং ওরস্যালাইন পান করা অত্যাবশ্যক।

ব্যথা  জ্বর নিয়ন্ত্রণ:

  • প্যারাসিটামল: জ্বর এবং শরীরের ব্যথা কমাতে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী শুধু প্যারাসিটামল গ্রহণ করা নিরাপদ।
  • NSAIDs পরিহার: অ্যাসপিরিন বা অন্যান্য নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগস (NSAIDs) যেমন আইবুপ্রোফেন (Ibuprofen) বা নেপ্রোক্সেন ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কখনোই খাওয়া উচিত নয়। কারণ যদি রোগটি ডেঙ্গু হয়তবে এই ওষুধগুলো অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে।
  • জয়েন্টের ব্যথা উপশম (চিকুনগুনিয়ায় জয়েন্টে ব্যথা দূর করার উপায়):
    • তীব্র ব্যথার সময় আইস প্যাক বা ঠান্ডা জলের সেঁক দিলে সাময়িক আরাম পাওয়া যেতে পারে।
    • ব্যথা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হালকা ফিজিওথেরাপি এবং কিছু ক্ষেত্রে রিউমাটোলজিস্টের তত্ত্বাবধানে নির্দিষ্ট ওষুধ সেবন করতে হতে পারে।

চিকুনগুনিয়া রোগের ঔষধ (ঔষধ):

  • রোগের তীব্র পর্যায়ে শুধুমাত্র জ্বর  ব্যথা কমানোর জন্য ওষুধ দেওয়া হয়।
  • দীর্ঘমেয়াদী গাঁটের ব্যথার জন্য চিকিৎসক মাঝে মাঝে স্বল্প সময়ের জন্য স্টেরয়েড বা অন্যান্য অ্যান্টি-রিউমাটিক ঔষধ ব্যবহারের পরামর্শ দিতে পারেন।

🛑 সতর্কতা: চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো অ্যান্টিবায়োটিক বা ব্যথানাশক ওষুধ গ্রহণ করা উচিত নয়।


রোগ নির্ণয়  প্রয়োজনীয় পরীক্ষা (চিকুনগুনিয়া টেস্ট)

চিকুনগুনিয়া নিশ্চিতভাবে নির্ণয় করতে রক্ত পরীক্ষার প্রয়োজন হয়।

প্রয়োজনীয় পরীক্ষা (চিকনগুনিয়ার টেস্টের নাম কি):

  • আরটি-পিসিআর (RT-PCR): রোগের প্রথম - দিনের মধ্যে রক্তে ভাইরাসের জেনেটিক উপাদান (RNA) শনাক্ত করার জন্য এই পরীক্ষাটি সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য।
  • সেরোলজিক্যাল টেস্ট (Serological Test) – ELISA (IgM/IgG):
    • IgM অ্যান্টিবডি: সাধারণত - দিন পর থেকে রক্তে তৈরি হতে শুরু করে এবং সাম্প্রতিক সংক্রমণ নির্দেশ করে।
    • IgG অ্যান্টিবডি: পরবর্তীতে তৈরি হয় এবং পূর্বের সংক্রমণ বা রোগের প্রতিরোধ ক্ষমতা নির্দেশ করে।

পরীক্ষার খরচ (চিকুনগুনিয়া টেস্ট কত টাকা):

চিকুনগুনিয়া পরীক্ষার খরচ ল্যাবরেটরি এবং পরীক্ষার ধরনের উপর নির্ভর করে ভিন্ন হয়। সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এর খরচ তুলনামূলকভাবে কম বা বিনামূল্যে হতে পারে। বেসরকারী প্যাথলজি ল্যাবরেটরিতে এই পরীক্ষার জন্য সাধারণত একটি নির্দিষ্ট ফি নেওয়া হয়যা এলাকাভেদে পরিবর্তিত হতে পারে।


খাদ্য  পথ্যদ্রুত আরোগ্য এবং সুস্থতার জন্য (চিকুনগুনিয়া হলে কি খেতে হয়)



চিকুনগুনিয়া থেকে দ্রুত আরোগ্য লাভ এবং দীর্ঘমেয়াদী ক্লান্তি দূর করার জন্য সুষম খাদ্য গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।

  • জলীয় খাবারকে প্রাধান্য দিন:
    • বিশুদ্ধ পানীয় জলডাবের জললেবুর জলটাটকা ফলের রস এবং সবজি স্যুপ ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করে এবং শরীরকে শক্তি জোগায়।
    • ORS (ওরাল স্যালাইন) পান করা শরীরে ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
  • সহজপাচ্য খাবার: ভাতসেদ্ধ সবজিমাছের ঝোল বা পাতলা ডাল খান। এগুলি হজমে সাহায্য করে এবং শরীরে পুষ্টি সরবরাহ করে।
  • প্রতিরোধ ক্ষমতা বর্ধক খাদ্য: ভিটামিন সি এবং  সমৃদ্ধ খাবার (যেমন - টক ফলব্রকলিবাদামরোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে।
  • প্রোটিন: প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার (ডিমমাছমুরগির মাংসশরীরের ক্ষয়পূরণ এবং দ্রুত পেশী পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে।

চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধসবচেয়ে কার্যকর উপায়

চিকুনগুনিয়ার কোনো নির্দিষ্ট ভ্যাকসিন বা ঔষধ না থাকায় প্রতিরোধই হলো সবচেয়ে বড় সুরক্ষা। প্রতিরোধের মূল লক্ষ্য হলো বাহক মশা এডিসকে নিয়ন্ত্রণ করা এবং তাদের কামড় থেকে নিজেকে বাঁচানো।

মশার বংশবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ:

  • স্থির জল অপসারণ: এডিস মশা পরিষ্কারস্থির জলে ডিম পাড়ে। তাই বাড়ির আশেপাশে বা ছাদে জমে থাকা জলটায়ারফুলের টবএয়ার কন্ডিশনারের জল জমার স্থান ইত্যাদি সপ্তাহে অন্তত একবার পরিষ্কার করুন বা জল অপসারণ করুন।
  • পাত্র ঢেকে রাখা: জলের ট্যাঙ্কবালতি এবং অন্যান্য পাত্র সবসময় ঢেকে রাখুন।
  • পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা: বাড়ির ভেতরের এবং বাইরের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন  শুকনো রাখুন।

ব্যক্তিগত সুরক্ষা:

  • মশারি ব্যবহার: দিনের বেলায় বা রাতে ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করা আবশ্যক।
  • মশা তাড়ানোর ক্রিম: ত্বক  কাপড়ে ডিইটি (DEET) বা ইকারডিন (Icaridin) যুক্ত মশা তাড়ানোর লোশন/ক্রিম ব্যবহার করুন।
  • সুরক্ষিত পোশাক: লম্বা হাতার জামা এবং ফুল প্যান্ট পরিধান করুনবিশেষ করে ভোরবেলা এবং বিকেলে যখন মশা বেশি সক্রিয় থাকে।
  • জাল ব্যবহার: জানালায় এবং দরজায় মশা তাড়ানোর জন্য জাল ব্যবহার করুন।

চিকুনগুনিয়ার দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব  জটিলতা

বেশিরভাগ রোগীই চিকুনগুনিয়া থেকে পুরোপুরি সেরে ওঠেনতবে কিছু ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা দেখা দিতে পারে।

  • ক্রনিক আর্থ্রালজিয়া: বয়স্ক এবং পূর্বে আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে গাঁটের ব্যথা কয়েক মাস বা বছর ধরে চলতে পারে। এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দীর্ঘমেয়াদী জটিলতা।
  • স্নায়বিক সমস্যা: বিরল ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের প্রদাহ (Encephalitis) বা স্নায়বিক জটিলতা দেখা দিতে পারে।
  • চোখের সমস্যা: চোখের প্রদাহ বা রেটিনার সমস্যা হতে পারে।

💡 পরামর্শ: যদি জ্বর সেরে যাওয়ার পরেও গাঁটের ব্যথা দীর্ঘদিন স্থায়ী হয় বা বাড়তে থাকেতবে রিউমাটোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত।


উপসংহার

চিকুনগুনিয়া ভাইরাস একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যাযা প্রধানত এর তীব্র এবং দীর্ঘস্থায়ী জয়েন্ট ব্যথার কারণে জনজীবনে ভোগান্তি সৃষ্টি করে। যেহেতু এর কোনো নির্দিষ্ট প্রতিষেধক নেইতাই মশার বংশবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যক্তিগত সুরক্ষার মাধ্যমেই এই রোগের আক্রমণ থেকে বাঁচা সম্ভব। 

চিকুনগুনিয়ার লক্ষণ দেখা দিলে কালবিলম্ব না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া এবং ডেঙ্গুর ঝুঁকি মাথায় রেখে সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি মেনে চলা অত্যাবশ্যক। 

 সচেতনতা এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাই পারে চিকুনগুনিয়ার মতো মশাবাহিত রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাদের জয়ী করতে।


কিছু রিলেভেন্ট FAQ (প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী)

চিকুনগুনিয়া কোন মশার কামড়ে হয়?

চিকুনগুনিয়া মূলত এডিস ইজিপ্টি (Aedes aegypti) এবং এডিস অ্যালবোপিকটাস (Aedes albopictus) নামক মশার কামড়ে হয়। এই মশাগুলো ডেঙ্গু এবং জিকা ভাইরাসও ছড়ায় এবং এরা সাধারণত দিনের বেলায় সক্রিয় থাকে।

চিকুনগুনিয়া টেস্ট কখন করানো উচিত?

চিকুনগুনিয়ার লক্ষণ দেখা দেওয়ার  থেকে  দিনের মধ্যে IgM অ্যান্টিবডি পরীক্ষা অথবা রোগের প্রথম দিকে আরটি-পিসিআর (RT-PCR) পরীক্ষা করানো উচিত।

চিকুনগুনিয়া টেস্ট কত টাকা লাগতে পারে?

পরীক্ষার খরচ ল্যাবরেটরি এবং পরীক্ষার ধরনের ওপর নির্ভর করে। বেসরকারি ল্যাবরেটরিতে সাধারণত ELISA (IgM) টেস্টের জন্য একটি নির্দিষ্ট ফি নেওয়া হয়যা স্থানভেদে পরিবর্তিত হতে পারে।

চিকুনগুনিয়া হলে কি চোখ লাল হয়?

হ্যাঁকিছু ক্ষেত্রে চিকুনগুনিয়া ভাইরাসের সংক্রমণের ফলে চোখের প্রদাহ বা কনজাংটিভাইটিস হতে পারেযার কারণে চোখ লাল হতে পারে বা জ্বালাপোড়া করতে পারে।

চিকনগুনিয়ার টেস্টের নাম কি?

চিকুনগুনিয়া নির্ণয়ের জন্য প্রধানত সেরোলজিক্যাল টেস্ট করা হয়যার মধ্যে ELISA (IgM/IgG) পরীক্ষা উল্লেখযোগ্য। রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে RT-PCR পরীক্ষাও করা হয়।

চিকুনগুনিয়ায় জয়েন্টে ব্যথা দূর করার উপায় কী?

ব্যথা কমাতে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্যারাসিটামল গ্রহণজয়েন্টে ঠান্ডা সেঁক দেওয়া এবং দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার ক্ষেত্রে হালকা ব্যায়াম  ফিজিওথেরাপি নেওয়া যেতে পারে। কোনো অবস্থাতেই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অন্য ব্যথানাশক সেবন করবেন না।

চিকুনগুনিয়া হলে কি খেতে হয়?

চিকুনগুনিয়া হলে দ্রুত আরোগ্যের জন্য প্রচুর পরিমাণে জলীয় খাবার (ডাবের জলস্যুপফলের রস), সহজপাচ্য খাবার এবং ভিটামিন  প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য (যেমন - টক ফলসেদ্ধ সবজিমাছ/ডিমখাওয়া উচিত।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 


 

 

 

 

 

 

 

Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url